প্রায় অর্ধশত নারী-পুরুষ গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সদ্য বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর সরকারের ইয়াবা সিন্ডিকেটে জড়িত ছিল। এসব লোকদের ঘুরতে যাওয়ার নাম করে কক্সবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ফেরার পথে নিয়ে আসা হয় ইয়াবা।
এছাড়াও জাহাঙ্গীর গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় প্রায়ই ডিজে পার্টি আয়োজন করা হতো।
পার্টিতে আসা অতিথিদের কাছে বিক্রি করা হয় ইয়াবা। মাদক ও নারীসহ গোয়েন্দাদের হাতে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানান জাহাঙ্গীর।
গত ১৮ ডিসেম্বর প্রাইভেটকারের নিচে বিশেষ চেম্বার বানিয়ে ইয়াবা চোরাচালানের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় চার মাদককারবারীকে। তাদের দেওয়া তথ্যে এ ইয়াবা সিন্ডকেটের মূলহোতা হিসেবে গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর সরকারের নাম আসে। এ খবর প্রচারের পর পরই তাকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার চার আসামির তথ্য পর্যালোচনা করে ইয়াবার কারবারের সঙ্গে জাহাঙ্গীরের সম্পৃক্ততা পায়। নারী ও মাদকসহ গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।
২০২০ সালে জাহাঙ্গীর একাই কক্সবাজার গিয়ে ৮ হাজার পিস ইয়াবার একটি চালান নিয়ে আসেন মহাজন মহসিনের কাছ থেকে। এভাবেই তার ইয়াবা কারবার শুরু। পরবর্তীতে তার সিন্ডিকেটের দুই সদস্য রুবেল ও রাকিবের মাধ্যমে একের পর এক চালান নিয়ে আসেন গাজীপুরে। যেখানে রয়েছে তার ১০ থেকে ১২ জন ডিলার।
জাহাঙ্গীর বলেন, রুবেল ও রাকিব আমাকে পরামর্শ দেয় যে ব্যবসা করলে লাভ হবে। তখন আমি বিভিন্ন সময় রুবেলের মাধ্যমে মহসিনের কাছ থেকে কক্সবাজার থেকে ভ্রমণ করতে যেয়ে ওগুলো নিয়ে আসতাম। আমি মাঝে মধ্যে বিমানে ও বাসে যাতায়াত করতাম। আর রুবেল আমার কর্মী সে মহসিনের মাধ্যমে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে ব্যবসা শুরু করিয়ে দেই। ওখান থেকে ৭৫ টাকা করে কিনতাম আর ঢাকায় নিয়ে এসে ১১০-১২০ টাকা করে আমার কয়েকজন ডিলারের কাছে বিক্রি করতাম।
গাজীপুরে জাহাঙ্গীর তৈরি করেছেন এক বিশাল ইয়াবা সিন্ডিকেট। যেখানে কাজ করে প্রায় অর্ধশত লোক। আছে একাধিক নারীও। নিয়মিত ডিজে পার্টিরে আড়ালে নারীদের দিয়ে চলে মাদক কারবার। এই কাজে তার বড় ভাই আলমগীর সরকার তাকে সহায়তা করেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মো. হারুন অর রশিদ বলেন, জাহাঙ্গীর ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে মূলত এ মাদক কারবারি চালানোর জন্য। সে কিছু মেয়েকে ভাড়া করে সব সময় সঙ্গে রাখে। এখানে সে নাচ-গানেরও আয়োজন করে এবং সেখান থেকে এগুলো দেখানোর জন্য অনেক বড়লোকের ছেলে মেয়ের নিয়ে আসে ইয়াবা আসক্ত ও মাদক আসক্ত করে। কিছু কিছু সুন্দরীদের নিয়ে তারা আবার কক্সবাজার যায় এবং সেখান থেকে গাড়িতে করে আবার ইয়াবা নিয়ে আসে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, একটা পুরো বাজারের ইজারা দখলে নিয়ে সেখান থেকে টাকা তোলেন তিনি। এ ছাড়াও বিভিন্ন সাইড ব্যবসা করেন। সে নানাভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে গার্মেন্টেসের মালিক হয়েছেন।